রোজা কত তারিখে ২০২৫? রমজান কবে, কোন মাসে শুরু?
রোজা কবে হবে তা মূলত চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে। ইসলামি ক্যালেন্ডারের প্রত্যেক মাস শুরুর তারিখ চাঁদ দেখা সাপেক্ষে নির্ধারিত হয়।
২০২৫ সালের রমজান কত তারিখ?
২০২৫ সালের রমজানের সঠিক তারিখ এখনও নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। তবে ধারণা করা হচ্ছে বাংলাদেশে আগামী ২০২৫ সালের মার্চের ১ম দিনেই প্রথম রোজা হবে।
রোজা কবে, প্রথম রোজা কত তারিখে ২০২৫
বাংলাদেশে ২০২৫ সালের রোজা মার্চ মাসের ১ তারিখে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এই তারিখটি শতভাগ নিশ্চিত নয়।
কেন তারিখ নিশ্চিত নয়?
কারণ হলো, ইসলামিক ক্যালেন্ডার চন্দ্র দর্শনের উপর ভিত্তি করে। তাই প্রতি বছর রমজানের তারিখ পরিবর্তিত হয়।
সাধারণত, রমজান মাস ইসলামিক বছরের নবম মাস এবং প্রতি বছর ১১ দিন আগে শুরু হয়। ২০২৫ সালে রমজান মাস মার্চ মাসে শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
রোজার শুরুর তারিখ কিভাবে জানবেন?
আপনার এলাকার মসজিদ বা ইসলামিক সংস্থা থেকে সঠিক তারিখ জানতে পারবেন। এছাড়াও বিভিন্ন ইসলামিক ক্যালেন্ডার অ্যাপ আপনাকে সঠিক তারিখ সম্পর্কে অবহিত করতে পারে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো রমজান শুরুর তারিখ সম্পর্কে খবর প্রকাশ করে। তাই সেখানেও চোখ রাখতে পারেন।
মনে রাখবেন, রমজানের সঠিক তারিখ জানতে চাঁদ দেখার ঘোষণা অপেক্ষা করতে হবে।
রোজার ফজিলত ও গুরুত্ব
রোজা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। বিশেষ করে পবিত্র রমজান মাসের রোজা মুসলমানদের জন্য ফরজ। রোজা রাখার মাধ্যমে একজন মুসলমান আল্লাহর সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং আত্মশুদ্ধি করে।
রোজার ফজিলত
রোজা রাখার মাধ্যমে একজন মুসলমান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করে। রোজা রাখলে আল্লাহ তা’আলা অনেক গুনাহ মাফ করে দেন।
রোজা রাখার মাধ্যমে একজন মুসলমান নিজেকে নানা ধরনের মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে এবং আত্মশুদ্ধি করে। রোজা রাখার মাধ্যমে একজন মুসলমান দুঃখী মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠে।
রোজা রাখার মাধ্যমে একজন মুসলমান ধৈর্য শিখে। রোজা রাখার মাধ্যমে মুসলিম সমাজের মধ্যে একতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ বৃদ্ধি পায়।
রোজার গুরুত্ব
রোজা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। কুরআনে রোজা রাখার বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজে রোজা রাখতেন এবং উম্মতকেও রোজা রাখতে উৎসাহিত করতেন। রোজা রাখার মাধ্যমে একজন মুসলমান আধ্যাত্মিকভাবে উন্নতি লাভ করে।
রমজানের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস
রমজান মাস ইসলামের সবচেয়ে পবিত্র মাস। এই মাসে রোজা রাখার ফজিলত কুরআন ও হাদিসে বহুবার উল্লেখিত হয়েছে। আসুন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিসের মাধ্যমে রমজানের ফজিলত সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক:
রোযাদারের মুখের গন্ধ মিশকের চেয়েও সুগন্ধিযুক্ত
হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
সেই সত্তার শপথ, যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন, রোযাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর নিকট মিশকের সুগন্ধির চেয়েও অধিক সুগন্ধিময়।
–সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৯০৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১১৫১ (১৬৩); মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৭১৭৪; সুনানে নাসায়ী, হাদীস : ২৫২৩; সুনানে ইবনে মাজাহ- ১৬৩৮
রোযাদারেরজন্য দুটি আনন্দের মুহূর্ত
হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
রোযাদারের জন্য দুটি আনন্দের মুহূর্ত রয়েছে, যখন সে আনন্দিত হবে। এক. যখন সে ইফতার করে তখন ইফতারের কারণে আনন্দ পায়। দুই. যখন সে তার রবের সাথে মিলিত হবে তখন তার রোযার কারণে আনন্দিত হবে।
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, যখন সে আল্লাহর সাথে মিলিত হবে, আর তিনি তাকে পুরস্কার দিবেন, তখন সে আনন্দিত হবে।
–সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৯০৪, ১৮৯৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১১৫১ (১৬৩, ১৬৪, ১৬৫); মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৯৪২৯, ৭১৭৪; সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ৭৬৬
রোযাদারের সকল গুনাহ মাফ হয়ে যায়
হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন–
যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমযান মাসের রোযা রাখবে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।
-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৩৮, ২০১৪; সহীহ মুসলিম ৭৬০(১৬৫); মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৭১৭০; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৮৯৬৮
রোযা কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
রোযা ও কুরআন কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোযা বলবে, হে রব! আমি তাকে খাদ্য ও যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত রেখেছি অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন।
কুরআন বলবে, আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছি, (অর্থাৎ না ঘুমিয়ে সে তেলাওয়াত করেছে) অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অতঃপর তাদের উভয়ের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।
–মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৬৬২৬; মুসতাদরাকে হাকিম, হাদীস : ২০৮০; বাইহাকী শুয়াবুল ঈমান, হাদীস : ১৯৯৪
রোযা জাহান্নাম থেকে রক্ষাকারী ঢাল ও দুর্গ
হযরত জাবির রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
আমাদের মহান রব ইরশাদ করেছেন- রোযা হল ঢাল। বান্দা এর দ্বারা নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবে। রোযা আমার জন্য আর আমিই এর পুরস্কার দিব।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৪৬৬৯; শুয়াবুল ঈমান বাইহাকী, হাদীস : ৩৫৭০
শেষ কথাঃ রোজা একজন মুসলমানের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। এটি একজন মুসলমানকে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে, গুনাহ থেকে মুক্ত হতে এবং আধ্যাত্মিকভাবে উন্নতি করতে সাহায্য করে।