পরিবেশ দূষণ কাকে বলে? কত প্রকার? ও দুষণের কারণ জানুন
আজকের এই পোস্টে আমরা জানবো, পরিবেশ দূষণ কাকে বলে? পরিবেশ দূষণ কত প্রকার? পরিবেশ দূষণের কারণ, পরিবেশ দূষণের প্রভাব ও পরিবেশ দূষণ রোধে আমাদের করণীয়।
পরিবেশ দূষণ কাকে বলে?
পরিবেশ দূষণ বলতে বোঝায় পরিবেশের উপাদানগুলোতে এমন কোনও পদার্থ বা শক্তির মিশ্রণ যা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং জীবজগতের জন্য ক্ষতিকর।
পরিবেশ দূষণের কারণ
মানবসৃষ্ট কারণ:
- যানবাহন: যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া বায়ু দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ।
- কলকারখানা: কলকারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া, ধুলিকণা এবং রাসায়নিক বায়ু, পানি এবং মাটি দূষিত করে।
- কৃষিক্ষেত্র: কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার মাটি এবং পানি দূষিত করে।
- প্লাস্টিক: প্লাস্টিকের ব্যবহার বৃদ্ধি পরিবেশ দূষণের একটি বড় কারণ। প্লাস্টিক পচতে অনেক সময় লাগে এবং পরিবেশে দীর্ঘস্থায়ী দূষণ তৈরি করে।
- ময়লা-আবর্জনা: ময়লা-আবর্জনা যথাযথভাবে ব্যবস্থাপনা না করা হলে পরিবেশ দূষিত হয়।
অন্যান্য: বিদ্যুৎ কেন্দ্র, তেল ও গ্যাস খনি, নির্মাণ কাজ, ইত্যাদি থেকেও পরিবেশ দূষিত হতে পারে।
প্রাকৃতিক কারণ:
- আগ্নেয়গিরি: আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত ছাই ও ধোঁয়া বায়ু দূষণের কারণ হতে পারে।
- ঝড়: ঝড়ের ফলে ধুলোবালি ও লবণাক্ত পানি পরিবেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
- বন্যা: বন্যার ফলে ক্ষেতে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক পানিতে মিশে পানি দূষণের কারণ হতে পারে।
- ভূমিকম্প: ভূমিকম্পের ফলে ভূমিধস, বন্যা, ইত্যাদি ঘটতে পারে যা পরিবেশ দূষণের কারণ হতে পারে।
পরিবেশ দূষণ কত প্রকার?
পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান দূষিত হওয়ার উপর নির্ভর করে পরিবেশ দূষণকে বিভিন্ন প্রকারে ভাগ করা যায়।
প্রধান প্রকারভেদগুলো হলো:
- বায়ু দূষণ: যানবাহন, কলকারখানা, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ইত্যাদি থেকে নির্গত ধোঁয়া, ধুলিকণা এবং রাসায়নিক বায়ু দূষণের কারণ।
- পানি দূষণ: কলকারখানার বর্জ্য, কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার ত্রুটি, ইত্যাদি পানি দূষণের কারণ।
- মাটি দূষণ: কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক, প্লাস্টিক, ইত্যাদি মাটি দূষণের কারণ।
- শব্দ দূষণ: যানবাহনের হর্ণ, নির্মাণ কাজের শব্দ, ইত্যাদি শব্দ দূষণের কারণ।
- আলো দূষণ: অতিরিক্ত আলো ব্যবহার, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে, আলো দূষণের কারণ।
- তাপীয় দূষণ: বিদ্যুৎ কেন্দ্র, শিল্প-কারখানা, ইত্যাদি থেকে উৎপন্ন অতিরিক্ত তাপ তাপীয় দূষণের কারণ।
- পারমাণবিক দূষণ: পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দুর্ঘটনা, পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার, ইত্যাদি পারমাণবিক দূষণের কারণ।
এছাড়াও, পরিবেশ দূষণকে আরও কিছু উপপ্রকারে ভাগ করা যায়:
- জৈব দূষণ: জীবাণু, ভাইরাস, পরজীবী, ইত্যাদি দ্বারা পরিবেশ দূষণ।
- দৃশ্যমান দূষণ: ময়লা-আবর্জনা, প্লাস্টিক, ইত্যাদি দ্বারা পরিবেশ দূষণ।
- গন্ধ দূষণ: পচা মাংস, ময়লা-আবর্জনা, ইত্যাদি থেকে উৎপন্ন দুর্গন্ধ দ্বারা পরিবেশ দূষণ।
পরিবেশ দূষণের প্রভাব
- মানুষের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব: শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, ক্যান্সার, ত্বকের সমস্যা ইত্যাদি।
- জীবজগতের উপর প্রভাব: জীববৈচিত্র্য হ্রাস, জীবের আবাসস্থল ধ্বংস, বিলুপ্তি ইত্যাদি।
- পরিবেশের উপর প্রভাব: বৈশ্বিক উষ্ণতা, জলবায়ু পরিবর্তন, অ্যাসিড বৃষ্টি ইত্যাদি।
পরিবেশ দূষণ রোধে আমাদের করণীয়
পরিবেশ দূষণ রোধে আমরা যা করতে পারি
- পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
- পরিবেশবান্ধব যানবাহন ও প্রযুক্তি ব্যবহার করা।
- প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে আনা।
- পরিবেশবান্ধব কৃষি পদ্ধতি অবলম্বন করা।
- বৃক্ষরোপণ করা।
- পরিবেশ দূষণ রোধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
শেষ কথাঃ পরিবেশ দূষণ আমাদের স্বাস্থ ও পরিবেশের ক্ষেত্রে খুবই ক্ষতির কারণ। আমাদের সবার জায়গা থেকে পরিবেশ দূষণ রোধ করা উচিত। নয়তো একসময় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হবো আমরা।