হিজড়া সন্তান কেন হয়? কারণ জেনে নিন
আসসালামু আলাইকুম, আজকের এই পোস্টে আমরা জানবো, হিজড়া কাদের বলে? হিজড়া সন্তান কেন হয়? এবং হিজড়া সন্তান সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?
আরও জানবো, আমরা কিভাবে তাদের সহযোগিতা করতে পারি ও তাদের সাথে আমাদের কেমন আচরণ করা উচিত। চলুন শুরু করি…
হিজড়া সন্তান বলতে কি বুঝায়?
হিজড়া সন্তান বলতে সাধারণত এমন শিশুদের বোঝায় যাদের জন্মগতভাবে লিঙ্গ পরিচয় স্পষ্টভাবে পুরুষ বা মহিলা হিসেবে চিহ্নিত করা যায় না।
তাদের লিঙ্গ বৈশিষ্ট্য পুরুষ ও মহিলা উভয়ের কিছু বৈশিষ্ট্যের সমন্বয় হতে পারে অথবা পুরোপুরি ভিন্ন হতে পারে।
হিজড়া সন্তানদের কিছু বৈশিষ্ট্য হতে পারে:
- লিঙ্গাঙ্গের অস্বাভাবিকতা: পুরুষদের ক্ষেত্রে, লিঙ্গ ছোট বা অসম্পূর্ণ হতে পারে। মহিলাদের ক্ষেত্রে, যোনি অস্বাভাবিকভাবে ছোট বা ভগাঙ্কুর অনুপস্থিত হতে পারে।
- অভ্যন্তরীণ প্রজনন অঙ্গের অস্বাভাবিকতা: ডিম্বাশয় বা অন্ডকোষ অনুপস্থিত বা অস্বাভাবিক হতে পারে।
- হরমোনের ভারসাম্যহীনতা: শরীরে পুরুষ ও মহিলা উভয় হরমোনের উপস্থিতি থাকতে পারে।
হিজড়া সন্তানদের সমাজে ব্যাপক বৈষম্য ও অবহেলার সম্মুখীন হতে হয়। তাদেরকে প্রায়শই সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী হিসেবে দেখা হয়।
হিজড়া সন্তান কেন হয়? কারণ কি?
হিজড়া সন্তান জন্মের কারণ জটিল এবং একাধিক বিষয়ের উপর নির্ভর করে।
কিছু সম্ভাব্য কারণ গুলি হল:
- জিনগত ত্রুটি: কিছু ক্ষেত্রে, জিনগত ত্রুটির কারণে হিজড়া সন্তান জন্মাতে পারে। এই ত্রুটিগুলি ক্রোমোজোমের সংখ্যা বা গঠনে পরিবর্তন ঘটাতে পারে, যার ফলে লিঙ্গ নির্ধারণে সমস্যা দেখা দেয়।
- হরমোনের ভারসাম্যহীনতা: গর্ভাবস্থায় হরমোনের ভারসাম্যহীনতা লিঙ্গ বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে এবং হিজড়া সন্তান জন্মের কারণ হতে পারে।
- পরিবেশগত কারণ: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, গর্ভাবস্থায় কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ বা রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসার ফলে হিজড়া সন্তান জন্মাতে পারে।
- অজানা কারণ: অনেক ক্ষেত্রে, হিজড়া সন্তান জন্মের সঠিক কারণ জানা যায় না।
হিজড়া সন্তান জন্মের প্রতিরোধ করা যায়?
কোন শিশুর লিঙ্গ পরিচয় কী হবে তা জন্মের পর নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। তাই, “হিজরা সন্তান” জন্মগ্রহণ প্রতিরোধের কোন উপায় নেই।
হিজড়া সন্তান সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?
ইসলাম হিজড়া সন্তানদেরকে মানুষ হিসেবে সম্মান করার নির্দেশ দেয় এবং তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার আহ্বান জানায়।
ইসলামে হিজড়াদেরকে ‘খুনসা’ বলা হয়।
ইসলামে হিজড়া সন্তান সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
- লিঙ্গ নির্ধারণ: যদি শিশুর লিঙ্গ স্পষ্টভাবে পুরুষ বা মহিলা হিসেবে চিহ্নিত করা না যায়, তাহলে শিশুটি সাবালক হওয়ার আগ পর্যন্ত লিঙ্গ নির্ধারণ করা উচিত নয়।
- বিবাহ: যদি শিশুটি সাবালক হওয়ার পর পুরুষ হিসেবে চিহ্নিত হয়, তাহলে সে একজন মহিলাকে বিয়ে করতে পারবে। আর যদি শিশুটি মহিলা হিসেবে চিহ্নিত হয়, তাহলে সে একজন পুরুষকে বিয়ে করতে পারবে।
- উত্তরাধিকার: হিজড়া সন্তানও তার পিতামাতার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হতে পারবে।
- সামাজিক মর্যাদা: ইসলাম হিজড়াদেরকে সমাজের পূর্ণাঙ্গ সদস্য হিসেবে গ্রহণ করে এবং তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল ও সম্মানজনক আচরণ করার নির্দেশ দেয়।
হিজড়া সন্তানদের প্রতি আমাদের আচরণ
হিজড়া সন্তানদের প্রতি আমাদের আচরণ সম্মান, সহানুভূতি এবং সহমর্মিতা দ্বারা পরিচালিত হওয়া উচিত।
হিজড়াদের প্রতি আচরণের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
- সম্মান: হিজড়া সন্তানদেরও মানুষ হিসেবে সম্মান করা উচিত। তাদের লিঙ্গ পরিচয়ের ভিত্তিতে তাদের সাথে বৈষম্য করা উচিত নয়।
- সহানুভূতি: হিজড়া সন্তানরা প্রায়শই সমাজে বৈষম্য ও অবহেলার সম্মুখীন হয়। তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া এবং তাদের সমস্যাগুলি বোঝার চেষ্টা করা উচিত।
- সহমর্মিতা: হিজড়া সন্তানদের প্রতি সহমর্মিতা দেখানো এবং তাদের জীবনকে সহজ করে তোলার জন্য সাহায্য করা উচিত।
হিজড়াদের আমরা কিভাবে সাহায্য করতে পারি?
- সচেতনতা বৃদ্ধি: হিজড়া সন্তানদের সম্পর্কে সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং তাদের প্রতি ভুল ধারণা দূর করা।
- বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই: হিজড়া সন্তানদের প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করা এবং তাদের সমান অধিকারের জন্য কাজ করা।
- সহায়তা প্রদান: হিজড়া সন্তানদের শিক্ষা, কর্মসংস্থান, এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের মাধ্যমে তাদের জীবনকে সহজ করে তোলা।
হিজড়াদের নিয়ে বিশেষ বার্তা
হিজড়া সন্তানরাও আমাদের সমাজেরই অংশ এবং তাদের সম্মান ও অধিকার রক্ষা করা আমাদের সকলের কর্তব্য।
তাদের লিঙ্গ পরিচয়ের ভিত্তিতে তাদের বৈষম্য করা উচিত নয়। তাদের সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার অধিকার রয়েছে, যেমন শিক্ষা, কর্মসংস্থান, এবং স্বাস্থ্যসেবা ও ইত্যাদি।